• E-paper
  • English Version
  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০০ পূর্বাহ্ন

×

পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক : বাজার বন্ধ করে ভারতের ব্যবসায়ীদের বিক্ষো

  • প্রকাশিত সময় : বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৩
  • ৯৮ পড়েছেন

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পেঁয়াজের রপ্তানি শুল্ক ৪০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রতিবাদে বাজার বন্ধ রেখে দু’দিন ধরে বিক্ষোভ করেছেন দেশটির কৃষকরা। মঙ্গলবারও দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ করেন তারা। ভারতের সরকার রপ্তানি শুল্ক বৃদ্ধি করায় রান্নার অন্যতম প্রধান এই পণ্যের ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পাবে বলে দাবি করেছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে মঙ্গলবার সরকারের পক্ষ থেকে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
গত শনিবার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দেশটির  পেঁয়াজের রপ্তানির ওপর আরোপিত নতুন এই শুল্ক চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে জানানো হয়।

বিক্ষোভের দ্বিতীয় দিন গতকাল মঙ্গলবার অবিক্রিত পেঁয়াজ প্রতি কুইন্টাল ২৪১০ রুপিতে কিনে নেওয়ার ঘোষণা আসে। সরকারের বাড়তি দুই লাখ টন পেঁয়াজ জমা করার পরিকল্পনা আছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়। এরই মধ্যে তিন লাখ টন কেনা হয়ে গেছে।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পিযুশ গয়াল পেঁয়াজ কিনে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি রপ্তানিতে ‘প্রতিবন্ধকতার ভুল ব্যাখ্য়া’ দেওয়ার জন্য বিরোধী দলের তীব্র নিন্দা করেন।
পিযুশ গয়াল বলেন, ‘পেঁয়াজ কেনা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আমি সব পেঁয়াজ চাষিদের অনুরোধ করব আতঙ্কিত হয়ে তড়িঘড়ি করে কেউ পেঁয়াজ বিক্রি করবেন না।’
মহারাষ্ট্রের কৃষিমন্ত্রী ধনঞ্জয় মুণ্ডে বলেন, ‘পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ কর আরোপের পর চাষিরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। এতে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে তাঁরা ভাবছে।’
মহারাষ্ট্রের নাসিকে দুই দিনের বিক্ষোভের পর পেঁয়াজ সংগ্রহের এ আশ্বাস আসে। ব্যবসায়ী সমিতির এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত দুই দিন এ অঞ্চলে পেঁয়াজ বাজার বন্ধ ছিল। এমনকি ভারতের বৃহত্তম পেঁয়াজ বাজার লাসালগাঁওয়েও বন্ধ ছিল পেঁয়াজ বেচাকেনা।
ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআই এক সূত্রের বরাত দিয়ে বলে, রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক উঠিয়ে না নিলে পেঁয়াজ বিক্রি হবে না বলে সমিতি হুমকি দিয়েছে।
চাষিরা বলছে, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে তাঁদের ফসল প্রায় অর্ধেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতবারও সরকারের কোনো সহায়তা তারা পাননি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ বলেছে, পেঁয়াজের রপ্তানি শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত সোমবার মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলায় বিক্ষোভ করেন শত শত কৃষক। তারা নাসিক-আওরঙ্গবাদ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভের সময় কৃষকদের অনেকের গলায় পেঁয়াজের মালা দেখা যায়। ওই সময় রপ্তানি শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দেন তারা।
দেশটির প্রয়াত শারদ যোশী কৃষক সংগঠনের কর্মীরা মহারাষ্ট্রের মনমাদ-ইওলা মহাসড়কের ইয়েওলা এপিএমসির সামনে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এসময় রপ্তানি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহŸান জানিয়েছেন তারা। নাসিক জেলার স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলা কৃষকদের বিক্ষোভে মহাসড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি  তৈরি হয়।
কৃষকরা বলছেন, তারা ইতিমধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত এবং রপ্তানি শুল্ক আরোপের সরকারি সিদ্ধান্ত এই পণ্য থেকে উপার্জনের সম্ভাবনাকে আরও কমিয়ে দেবে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজন কৃষক বলেন, ইতিমধ্যে খরার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আমরা যখন পেঁয়াজের ভালো দাম পেতে শুরু করেছি, তখন কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা পেঁয়াজ চাষিদের প্রতি অবিচার।
এর আগে সোমবার সকালের দিকে ভারতের বৃহত্তম পাইকারি পেঁয়াজের বাজার লাসালগাঁওসহ নাসিক জেলার এগ্রিকালচার প্রোডিউস মার্কেট কমিটি (এপিএমসি) অনির্দিষ্টকালের জন্য পেঁয়াজের নিলাম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
নাসিক জেলা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতি অনির্দিষ্টকালের জন্য রান্নাঘরের প্রধান এই পণ্যের নিলামে অংশ না নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহŸান জানিয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের পেঁয়াজ রপ্তানির শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত নিলাম বয়কট অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ভারতের বার্ষিক খুচরা মূল্যস্ফীতি গত ১৫ মাসের সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশে পৌঁছেছে; যা তার আগের মাসের ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশের তুলনায় বেশি। অন্যদিকে, দেশটিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সামগ্রিক ভোক্তা মূল্যের প্রায় অর্ধেক ১১ দশমিক ৫১ শতাংশে পৌঁছেছে। দেশটিতে খুচরা খাদ্য মূল্যস্ফীতি ২০২০ সালের জানুয়ারির পর চলতি বছর সর্বোচ্চ ছুঁয়েছে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ রুপি হতে পারে।
চলতি অর্থ-বছরের ১ এপ্রিল থেকে ৪ আগস্টের মধ্যে ভারত ৯ লাখ ৭৫ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে। ভারতের পেঁয়াজের শীর্ষ তিন আমদানিকারক দেশ হলো বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ, ইকোনমিক টাইমস।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA